জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০২৫: মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা গেজেটে প্রকাশ
বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যুক্ত হলো। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ আনুষ্ঠানিকভাবে গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই অধ্যাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় আনা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।
✅ মুক্তিযুদ্ধের নতুন সংজ্ঞা ২০২৫ অনুযায়ী:
নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে,
“মুক্তিযুদ্ধ” বলতে বোঝায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশের জনগণের জন্য স্বাধীনতা, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিচালিত সেই যুদ্ধ—যেখানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগী সংগঠনসমূহ যেমন রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয়েছে।
✅ বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা:
সংশোধিত আইনে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে:
-
দেশের ভেতরে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী নাগরিকগণ
-
ভারতের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তালিকাভুক্ত মুক্তিকামী যোদ্ধারা
-
হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীরা
-
সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ই.পি.আর), পুলিশ, মুক্তিবাহিনী, মুজিবনগর সরকারের অধীনে স্বীকৃত বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যগণ
-
যুদ্ধকালীন নির্যাতিত নারীগণ (বীরাঙ্গনা)
-
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা সহকারীগণ
📅 গেজেট প্রকাশ ও আইন অনুমোদন:
২০২৫ সালের ১৫ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আইনটির নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর ৩ জুন রাতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশ-২০২৫ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
🔁 পূর্ববর্তী সংজ্ঞার তুলনায় পরিবর্তন:
২০২২ সালের গেজেটে যেসব সংগঠনের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল, এবারের সংশোধনে তৎকালীন মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকার বিষয়টি আরো স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদেরও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
🔍 কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
এই নতুন আইন ও সংজ্ঞা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আরো পরিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে উপস্থাপন করছে। এটি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থাকবে।

0 মন্তব্যসমূহ