মুজিবের নাম ফেরানোর আন্দোলন: ইউনুস সরকারের পতনের আলামত?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়





শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ও স্মৃতি মুছে ফেলার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে ইউনুস সরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ফিল্মসিটি থেকে একে একে মুছে ফেলা হচ্ছে মুজিবের নাম। এই প্রক্রিয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল'-এর নামও পরিবর্তন করা হয়।

তবে এবার ওই নাম পুনর্বহালের দাবি তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের (একাংশ) শিক্ষার্থীরা। তাঁরা উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপিও জমা দিয়েছেন।

মুজিবের স্মৃতি মুছতে সরকারি তৎপরতা

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের নামে মুছে ফেলা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। ভেঙে ফেলা হয়েছে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক মুজিবভবন। রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে সরানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ছবি। সবচেয়ে বিতর্কিত ঘটনা—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনির্মিত ছাত্র হলের নামকরণ করা হয়েছে যুদ্ধাপরাধী ফজলুল কাদের চৌধুরীর নামে, যিনি চট্টগ্রামে গণহত্যার মূল হোতা ছিলেন।

জাহাঙ্গীরনগরে উল্টো হাওয়া: মুজিবের নাম ফেরানোর দাবি

তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃশ্যপট ভিন্ন। ২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শেখ পরিবারের নামযুক্ত চারটি আবাসিক হলের নামফলক মুছে দেন এবং নতুন নামকরণের দাবি জানান। পরে, ১৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট 'শেখ রাসেল হল', 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল', 'শেখ হাসিনা হল' ও 'বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল'-এর নাম বাতিল করে।

এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট (একাংশ) উপাচার্যের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেয়। সংগঠনটির সভাপতি ফাইজা মেহজাবিন স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়:

“১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন একই মুক্তির বোধ থেকে উৎসারিত। বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকার করে এ দুটি আন্দোলনকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করানো এক স্বৈরাচারী মানসিকতার পরিচায়ক।”




 

নতুন নাম নয়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ফেরানোর দাবি

শুধু মুজিব হল নয়, স্মারকলিপিতে বাকি তিনটি হলের ক্ষেত্রেও নামকরণের নতুন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে মূল বার্তা পরিষ্কার: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর অবদান মুছে ফেলার যেকোনো প্রচেষ্টা এই প্রজন্ম মেনে নেবে না।

প্রশ্ন উঠছে—মুজিব ফেরানোর দাবিতেই কি ইউনুস সরকারের পতন শুরু?

এই আন্দোলন শুধু নাম পুনর্বহালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি একপ্রকার ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতার প্রকাশ। বঙ্গবন্ধুর নাম ফেরানোর দাবি আজ জাতীয় রাজনীতিতে বড় বার্তা দিচ্ছে—নতুন প্রজন্ম ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টার বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে।