আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে গুমের ১৪০টি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে, অভিযুক্ত এক হাজারের বেশি

আওয়ামী লীগ গুম অভিযোগ





আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় দেড় দশকের শাসনামলে সংঘটিত গুমের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগে ১৪০টি মামলা দাখিল হয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে এক হাজারের বেশি ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর সরকারের মন্ত্রী, এমপি, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার ও আত্মীয়রা সরাসরি ট্রাইব্যুনালে গিয়ে এসব অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযুক্তদের তালিকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী এবং ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের মাইকেল চাকমার নাম রয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, গুম, হত্যা, নির্যাতন, অপহরণসহ মোট ৩৫৭টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্যে ১৪০টি শুধুমাত্র গুম সংক্রান্ত। অধিকাংশ অভিযোগ তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় পাঠানো হয়েছে।

গুম পরিস্থিতি মূল্যায়নে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের গুমবিষয়ক কমিটির দুই সদস্য ঢাকায় এসে ১৬ জুন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রতিনিধিদলে ছিলেন ডব্লিউজিইআইডি’র ভাইস চেয়ারম্যান গ্রাজিনা বারনোস্কা ও আনা লোরেনা ডেলগাদিলো পেরেজ।

তদন্ত সংস্থার প্রধান আনসার উদ্দিন খান পাঠান জানিয়েছেন, গুমের অভিযোগগুলোকে কেন্দ্র করে ‘আয়নাঘর’ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয় একত্রিত করে কাঠামোগতভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ ও মাইকেল চাকমার অভিযোগগুলো পৃথকভাবে তদন্ত করা হচ্ছে, যা ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।





শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
২০২4 সালের ২৫ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গুম মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

বিএনপির অভিযোগ ও পরবর্তী পদক্ষেপ
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ ২০২৪ সালের ৩ জুন লিখিত অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ সাতজনকে গুমের জন্য দায়ী করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ৭ হাজার ১৮৮ জনকে হত্যা বা নিখোঁজ করা হয়েছে, যার মধ্যে ৭০৯ জন সরাসরি গুমের শিকার।

এর আগে ৯ জানুয়ারি দলের কেন্দ্রীয় নেতা এম ইলিয়াস আলীসহ ২,২৭৬ জন নেতাকর্মীর গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে বিএনপি। ১৮ ডিসেম্বর গুমের পৃথক অভিযোগ করেন ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমা।

গুম মামলার শুনানি ২৪ জুন
গুম ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪ জুন। এ মামলায় অভিযুক্তদের একজন র‍্যাবের সাবেক ডিজি জিয়াউল আহসান বর্তমানে কারাগারে।

এদিকে, গঠিত অন্তর্বর্তী তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে গত দেড় দশকে সংঘটিত গুমের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়েছে।