জুলাই আন্দোলনের আহত ও নিহতদের পুনর্বাসন বিতর্ক: সুযোগ-সুবিধা না ‘নতুন কোটা’?
২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থনে আহত ও নিহতদের পুনর্বাসন নিয়ে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। একদিকে যেমন সরকার বলছে এটি শহীদ পরিবার ও আহতদের সম্মান এবং পুনর্বাসনের উদ্যোগ, অন্যদিকে সমালোচকরা এটিকে নতুন ধরনের ‘কোটা সংস্কৃতি’ ও সুবিধাভোগী শ্রেণি তৈরির পূর্বাভাস হিসেবে দেখছেন।
📌 পুনর্বাসনের সরকারি উদ্যোগ
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর অধীনে সরকার এখন পর্যন্ত নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নিয়েছে:
-
আহতদের শ্রেণিবিন্যাস:
-
ক শ্রেণি (অতি গুরুতর): ৪৯৩ জন
-
খ শ্রেণি (গুরুতর): ৯০৮ জন
-
গ শ্রেণি (আহত): ১০,642 জন
-
-
ভাতা ও সুবিধা:
-
ক শ্রেণি: এককালীন ৫ লাখ টাকা + মাসিক ২০,০০০ টাকা
-
খ শ্রেণি: এককালীন ৩ লাখ টাকা + মাসিক ১৫,০০০ টাকা
-
গ শ্রেণি: এককালীন ১ লাখ টাকা + মাসিক ১০,০০০ টাকা
-
নিহত পরিবার: এককালীন ৩০ লাখ টাকা + মাসিক ২০,০০০ টাকা
-
-
অতিরিক্ত সুবিধা:
-
আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা
-
চাকরিতে অগ্রাধিকার
-
করছাড় (৫.২৫ লাখ পর্যন্ত)
-
ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ
-
সহজ শর্তে ঋণ
-
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ: ৪০৫ কোটি টাকা (পূর্ববর্তী বরাদ্দ: ২৩২ কোটি টাকা)
🤔 বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু: পুনর্বাসন না নতুন কোটা?
📌 সমর্থকদের মতামত:
-
নাহিদ ইসলাম (এনসিপি আহ্বায়ক) বলছেন,
“এটি মুক্তিযোদ্ধা কোটার মতো নয়। এখানে পরিবার হারানো বা স্থায়ীভাবে পঙ্গু হওয়া মানুষদের আর্থিক সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে।” -
উমামা ফাতেমা, যিনি আন্দোলনের পর আহতদের নিয়ে কাজ করছেন, বলছেন,
“সরকার বিষয়টিকে খুব ‘সারফেস লেভেলে’ হ্যান্ডেল করছে। শুধু টাকা দিলেই পুনর্বাসন নয়—সক্ষমতা উন্নয়ন, সাইকো-সোশ্যাল সাপোর্ট, এবং ইনক্লুশন জরুরি।”
📌 সমালোচকদের উদ্বেগ:
-
সীমা আক্তার (আন্দোলনকারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) বলছেন,
“সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া যায় না। ফ্ল্যাট, কোটা, করছাড়—এসব নিয়ে নতুন ধরনের ‘আহত লীগ’ তৈরির আশঙ্কা আছে।” -
আরিয়ান আহমেদ, যিনি গুলিবিদ্ধ হন, বলেন,
“কোটা সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়াই করে আজ আবার আমরা কোটা চালু করতে যাচ্ছি—এটা তো সাংঘর্ষিক।” -
বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন,
“এই অর্থ তো সরকারের ব্যক্তিগত নয়। জনগণের টাকায় কিছু লোককে বাড়তি সুবিধা দিলে সেটা অন্যায়ের শামিল।”
🏛 সরকারের অবস্থান:
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বিবিসি বাংলাকে বলেন,
“এটা কোটা নয়। এটি নির্দিষ্ট সংখ্যক শহীদ ও আহতদের সীমিত পুনর্বাসন। ভবিষ্যতে এটি প্রজন্ম-পরম্পরায় ছড়াবে না। মুক্তিযোদ্ধা কোটার মতো দীর্ঘস্থায়ী হবে না।”
📌 পুনর্বাসন বনাম বৈষম্য: করণীয় কী?
🔹 সুশৃঙ্খল যাচাই ও ডাটাবেইস তৈরি
🔹 অসচ্ছল ও প্রকৃত আহত/নিহতদের অগ্রাধিকার
🔹 সুযোগের সীমা ও সময়সীমা নির্ধারণ
🔹 কর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ ও সমর্থন প্রোগ্রাম
🔹 রাজনৈতিক অপব্যবহার রোধে ট্রান্সপারেন্সি গ্যারান্টি
0 মন্তব্যসমূহ