ভারতে নিষিদ্ধ ৭টি সাহসী ও বিতর্কিত সিনেমা: কারণ নগ্নতা, যৌনতা ও ধর্মীয় উপস্থাপনা

ভারতের চলচ্চিত্র শিল্প বিশ্বজুড়ে একটি বিশাল অবস্থান দখল করে আছে। বলিউড ছাড়াও ভারতের আঞ্চলিক ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিগুলো—যেমন তামিল, বাংলা, মালয়ালম, কন্নড়, এবং মারাঠি সিনেমা—বৈচিত্র্যময় গল্প, সাহসী নির্মাণ এবং সংস্কৃতির সমৃদ্ধ উপস্থাপন নিয়ে এগিয়ে চলেছে। চলচ্চিত্র নির্মাণের সংখ্যার দিক দিয়ে ভারত পৃথিবীর শীর্ষে অবস্থান করছে।
তবে এর বিপরীতে রয়েছে ভারতের সেন্সর বোর্ড (CBFC - Central Board of Film Certification)-এর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও নিষেধাজ্ঞা। যৌনতা, নগ্নতা, সহিংসতা এবং ধর্মীয় সংবেদনশীল বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে বহু সিনেমা ভারতে কখনো মুক্তি পায়নি। যদিও কিছু ছবি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে, তবুও দেশজুড়ে তারা নিষিদ্ধ রয়ে গেছে।
এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো ভারতে নিষিদ্ধ ৭টি সাহসী ও বিতর্কিত সিনেমা, যেগুলো তাদের বিষয়বস্তু ও চিত্রায়নের কারণে CBFC-র নজরে পড়ে এবং নিষিদ্ধ হয়।
১. Gandu (গান্ডু) – ২০১০
-
পরিচালক: কৌশিক মুখার্জি (Q)
-
ভাষা: বাংলা
-
অভিনয়ে: অনুব্রত বসু, ঋ সেন
এই সিনেমা বাংলা সাহিত্যে এক সাহসী পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত। একজন হতাশাগ্রস্ত যুবকের জীবনে মাদক, হিপ-হপ, হস্তমৈথুন ও যৌনতার নিরীক্ষামূলক উপস্থাপন ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
👉 CBFC সিনেমাটি কোনো ছাড়পত্র দেয়নি, এবং ভারতে এটি কখনো মুক্তি পায়নি, যদিও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
২. Kama Sutra: A Tale of Love – ১৯৯৬
-
পরিচালক: মীরা নায়ার
-
অভিনয়ে: ইন্দিরা ভার্মা, রেখা, রমন ত্রিখা
কামসূত্রের মতো প্রাচীন যৌনশাস্ত্রের আলোকে নির্মিত এই সিনেমায় নগ্নতা এবং যৌন সম্পর্কের চিত্রায়ন ছিল শিল্পিত ও নান্দনিক।
👉 কিন্তু ভারতের রক্ষণশীল সমাজ ও সেন্সর বোর্ড ছবিটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, যদিও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এটি বেশ প্রশংসিত হয়।
৩. Unfreedom – ২০১৫
-
পরিচালক: রাজ অমর মিত্রা
-
অভিনয়ে: প্রীতি গুপ্তা, আদিল হুসেন
এই ছবিতে একদিকে সমকামী নারীর প্রেম, অন্যদিকে ধর্মীয় মৌলবাদের সমালোচনা—এই দুই গল্প একত্রিত করা হয়েছে।
👉 CBFC একে "উগ্র ও সাংঘর্ষিক" আখ্যা দিয়ে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে দেয়।
৪. Paanch – ২০০৩
-
পরিচালক: অনুরাগ কাশ্যপ
-
অভিনয়ে: কেকে মেনন, তেজস্বিনী কোলহাপুরী
‘পাঁচ’ ছিল অনুরাগ কাশ্যপের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। তরুণদের অপরাধজগতের বাস্তব চিত্র তুলে ধরার জন্য মাদক, সহিংসতা ও অশ্লীল ভাষার ব্যবহার ছিল প্রবল।
👉 সেন্সর বোর্ড বারবার আপত্তি তোলায় ছবিটি মুক্তির অনুমোদন পায়নি।
৫. Sins – ২০০৫
-
পরিচালক: ভিনোদ পাধায়ে
-
অভিনয়ে: শাইনি আহুজা, সীমা রহমানি
একজন ক্যাথলিক পাদ্রির সঙ্গে এক নারীর যৌন সম্পর্কের গল্প নিয়ে নির্মিত এই ছবি ভারতীয় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রবল আপত্তির মুখে পড়ে।
👉 ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং নগ্নতা দেখানোর অভিযোগে CBFC ছবিটি নিষিদ্ধ করে।
৬. The Painted House – ২০১৫
-
পরিচালক: স্যঞ্জীব সুরেন্দ্রন
-
ভাষা: মালয়ালম
-
অভিনয়ে: নেহা মহাজন
এক চিত্রশিল্পী ও কিশোরী মডেলের মাঝে বিকৃত সম্পর্ক ও যৌনতা নিয়ে নির্মিত সাহসী এই ছবি নিয়ে চরম বিতর্ক ওঠে।
👉 CBFC একে "নৈতিক অবক্ষয়ের উদাহরণ" হিসেবে বিবেচনা করে প্রদর্শনের অনুমতি দেয়নি।
৭. Malik – ১৯৭২
-
পরিচালক: এস এম শাহিদ
-
অভিনয়ে: রাজেশ খান্না, শর্মিলা ঠাকুর
এই ছবিতে ইসলাম ধর্মের উপস্থাপন এবং যৌনতা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
👉 সেন্সর বোর্ডের মতে, এটি "সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে"—এই যুক্তিতে ছবিটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়।
🔍 উপসংহার:
ভারতের চলচ্চিত্র জগত যেমন সাহসী নির্মাণে বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত, তেমনি সেন্সর বোর্ডের কঠোর নীতিমালার কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও সমাজ-বিচারধর্মী ছবি দিনের আলো দেখেনি।
এই ছবিগুলোর নিষেধাজ্ঞা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, সিনেমা কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়—এটি মতপ্রকাশ, প্রতিরোধ ও সমাজ বদলের হাতিয়ার।
তবে সেই হাতিয়ারকে কতটা স্বাধীনভাবে ব্যবহার করা যাবে, তা এখনো রাজনৈতিক ও সামাজিক বিবেচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
0 মন্তব্যসমূহ