উমামা ফাতেমার সরে দাঁড়ানো: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অভ্যন্তরীণ সংকট প্রকাশ্যে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। শুক্রবার দিবাগত রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক আবেগঘন পোস্টে তিনি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কাউন্সিল, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং সুবিধাবাদী আচরণের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা
উমামা লেখেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে আমার আনুষ্ঠানিক যাত্রা এখানেই শেষ হলো।” এর মাধ্যমে তিনি কার্যত সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে নিজের দায়িত্বের ইতি টানলেন।
এনসিপি ও রাজনৈতিক চাপ
তিনি জানান, এনসিপি (নতুন রাজনৈতিক দল) গঠনের পর অসমাপ্ত কাজের দায়বদ্ধতা থেকে তিনি এই ব্যানারে যুক্ত থাকলেও, পরবর্তীতে দলীয় ‘লেজুড়বৃত্তি’ ও রাজনৈতিক প্রেসক্রিপশন অমান্য করে স্বাধীনভাবে কাজ করতে গিয়ে নানা চাপের মুখে পড়েন।
“অনলাইন, অফলাইনে ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করা হয় যাতে আমি এই ব্যানার নিয়ে কাজ না করি।
অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র ও ‘Smear Campaign’-এর অভিযোগ
উমামা তাঁর পোস্টে অভিযোগ করেন, যাঁদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলনে ছিলেন, সেই সহযোদ্ধারাই পরবর্তীতে তাঁকে টার্গেট করে জুনিয়রদের দিয়ে পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার চালান।
“এই সো কল্ড সহযোদ্ধারা মানুষকে টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করে, প্রয়োজন শেষ হলে ছুড়ে ফেলতে এক মুহূর্তও লাগে না।”
তিনি জানান, সুবিধাবাদী একটি গোষ্ঠী প্ল্যাটফর্মটির ভেতর থেকে “পোকার মতো” ক্ষয় করে ফেলেছে। যদিও অনেক শুভনিয়তাসম্পন্ন সদস্য ছিলেন, তাঁরাও প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি।
পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ও মানবিক যন্ত্রণা
উমামা জানান, এপ্রিল-মে মাসে কার্যত বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন এবং “Empowering our Fighters” ও বিজ্ঞানভিত্তিক কাজের দিকে মনোনিবেশ করেছেন।
তবে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না।
“আমি তো মানুষ, অভ্যুত্থানের কারণে পারি নাই… আমি এই প্ল্যাটফর্মে দেশ সংস্কার করতে আসছিলাম, কাদা ছোড়াছুড়ি করতে না।”
মূল্যায়ন ও প্রভাব
উমামা ফাতেমার সরে দাঁড়ানো শুধু একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যন্তরীণ সংকট ও নেতৃত্বের দুর্বলতা স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে। তাঁর অভিযোগগুলো সংগঠনটির কাঠামো ও নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
0 মন্তব্যসমূহ